৮ জুলাই ২০২৫ ছিল “বিশ্ব মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট দিবস”, কিন্তু দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ বা পেশাজীবী সংগঠনগুলো কোনো কর্মসূচি পালন করেনি, এমনকি অনেকেই এই দিবসটির কথা মনে রাখেননি। এটি কেবল একটি পেশার প্রতি অবহেলার পরিচায়ক নয়, বরং এটি আমাদের স্বাস্থ্যসেবার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশকে অস্বীকার করার নামান্তর বলে।
মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট পেশা বিশ্বজুড়ে চিকিৎসা ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এই পেশার মানুষগুলো নিরবেই কাজ করে যাচ্ছেন রোগ নির্ণয়, থেরাপি, ইমেজিং, রেডিওলজি, ল্যাবরেটরি ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার সেবায়। অথচ চিকিৎসা পরিসরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও তাঁরা থাকছেন পর্দার আড়ালে—অবহেলিত ও অপ্রতিষ্ঠিত।
এই পেশার সূচনা হয়েছিল ১৭৬৬ সালের ৮ জুলাই। সেদিন জন্ম নিয়েছিলেন আধুনিক মেডিকেল টেকনোলোজির জনক, ফরাসি চিকিৎসক ডা. ডমিনিক জনি ল্যারি। তিনি নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সেনাবাহিনীর প্রধান সার্জন ছিলেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে আহতদের দ্রুত চিকিৎসায় ‘ট্রায়েজ সিস্টেম’ চালু করে বিপ্লব ঘটান। তার নির্দেশনায় সেনাদের বৈজ্ঞানিক প্রশিক্ষণ ও পরিচর্যার মাধ্যমে গড়ে ওঠে প্যারামেডিক্যাল সেবা, যা পরবর্তীকালে আজকের আধুনিক মেডিকেল টেকনোলোজির ভিত্তি স্থাপন করে।
বর্তমানে মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট পেশা অন্তর্ভুক্ত করে—ল্যাবরেটরি, ডেন্টাল, ফিজিওথেরাপি, রেডিওলজি, থেরাপি এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ারসহ একাধিক প্রযুক্তিভিত্তিক চিকিৎসা শাখা। চিকিৎসকদের পাশে থেকে রোগ নির্ণয় ও ব্যবস্থাপনায় প্রতিনিয়ত অবদান রেখে চলেছেন তারা।
বাংলাদেশে ১৯৬৬ সালে চালু হওয়া মেডিকেল টেকনোলোজি কোর্সে অগ্রগতি হলেও তা আশানুরূপ নয়। ২০১৮ সাল পর্যন্ত ‘টেকনিশিয়ান’ পদবী বহাল থাকলেও এরপর গেজেটের মাধ্যমে ‘মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট’ পদবী চালু করা হয়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত এই পেশার কোনো আলাদা কাউন্সিল নেই—যা একজন চিকিৎসক, নার্স বা ফার্মাসিস্টের মতো পেশাগত মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অন্তরায়।
যেখানে নার্সদের জন্য উপ-পরিচালক থেকে পরিচালক পর্যন্ত পদ রয়েছে, সেখানে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেও মেডিকেল টেকনোলোজিস্টদের জন্য উন্নীত হওয়ার কোনো স্পষ্ট সুযোগ নেই। সরকার ‘অ্যালাইড হেলথ প্রফেশনাল শিক্ষা বোর্ড’ গঠনের কথা বললেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে প্রতি বছর ৮ জুলাই “বিশ্ব মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট দিবস” যথাযথ মর্যাদায় পালন করা যেমন প্রয়োজন, তেমনি ডা. ডমিনিক জনি ল্যারি’র অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেশে অবিলম্বে একটি শক্তিশালী কাউন্সিল ও শিক্ষা বোর্ড গঠন করতে হবে। এর মাধ্যমে দেশের প্রতিটি মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট তাদের প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান পাবে।
এটাই এখন সময়—আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ এই স্তম্ভকে উপেক্ষা না করে তাদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের কণ্ঠস্বর শোনা এবং তাদের যথার্থভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। স্বাস্থ্য প্রশাসনের প্রতি এই আবেদন রইলো—মেডিকেল টেকনোলোজিস্টদেরও যেন তাঁদের গুরুত্ব অনুযায়ী সম্মান দেওয়া হয়।
লেখকঃ
মোঃ শামীম শাহ
ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল টেকনোলোজি(ল্যাব)
বিএসসি ইন হেলর্থ টেকনোলোজি (ল্যাবরেটরি), ঢাবি।
প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক মহাসচিব, বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট এ্যালায়েন্স (বিএমটিএ) মোহাম্মাদপুর, ঢাকা।